আমার প্রিয় শিক্ষক
ভূমিকা : প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাজীবনে যাঁর সঙ্গে সবচেয়ে বেশি সম্পর্ক থাকে তিনি শিক্ষক । মাদরাসায় সব শিক্ষকদের মধ্যে কোনো কোনো শিক্ষক কারও নিকট অত্যন্ত প্রিয় হয়ে ওঠেন তাঁর পাঠদান পদ্ধতি , মধুর ব্যবহার এবং ব্যক্তিত্ব ও আদর্শের কারণে । তেমনই আমারও একজন প্রিয় শিক্ষক আছেন ।
প্রিয় হওয়ার কারণ : আমি আমাদের বাংলা শিক্ষক জহির স্যারকে সর্বাধিক পছন্দ করি । তাঁর আকর্ষণীয় পাঠদান , স্নেহময় আচরণ ও সুন্দর ব্যক্তিত্বের জন্যে আমি তাঁকে শ্রদ্ধা ও প্রশংসা করি । তাঁর শিক্ষা পদ্ধতি , ব্যক্তিত্ব এবং নম্র ব্যবহার আমাদের সবাইকে প্রীত করে । জহির স্যার আমাদের বাংলা পড়ান । মাতৃভাষা বাংলা বিষয়ের শিক্ষক হিসেবে তিনি আমার কাছে অতি প্রিয় ও অন্য সবার কাছে জনপ্রিয় । জহির স্যারের কণ্ঠস্বর যেমন মধুর , তেমন বাচনভঙ্গিও হৃদয়গ্রাহী । তাঁর উচ্চারণ যেমন সুস্পষ্ট ও বিশুদ্ধ , হাতের লেখাও তেমনই সুন্দর । তিনি সবসময় হাসিমুখে কথা বলেন । তিনি কখনও কাউকে কঠোর শাস্তি দেন না । তাই তিনি আমার প্রিয় শিক্ষক ।
পাঠদান পদ্ধতি : জহির স্যারের পাঠদান পদ্ধতি ভিন্ন প্রকৃতির । তিনি প্রতিদিন সঠিক সময়ে ক্লাসে আসেন । ব্ল্যাকবোর্ড পরিষ্কার করে তিনি তাতে সেদিনের পাঠ লেখেন । তারপর বাড়ির কাজ থাকলে তা আদায় করেন । এরপর আগের দিনের পড়া আলোচনা করেন । নতুন পড়া দিলে স্যার তা শ্রেণিকক্ষেই ভালোভাবে বুঝিয়ে দেন । নানারকম উদাহরণ ও সরস আলোচনার মাধ্যমে তিনি অনেক কঠিন বিষয়কে সহজ করে তোলেন । বাংলা বিষয়ে তিনি গভীর জ্ঞানের অধিকারী । তিনি পাঠকে খুবই আকর্ষণীয় করে উপস্থাপন করেন । ছাত্ররা মনোযোগ দিয়ে তাঁর কথা শোনে । তাঁর সুস্পষ্ট এবং সহজ - সরল প্রকাশভঙ্গি ছাত্রদের মন আকর্ষণ করে এবং তারা নিজেদের দুর্বলতা বুঝে উঠতে পারে । তাঁর শ্রেণিতে শৃঙ্খলা বিরাজ করে এবং এটা একজন শিক্ষকের বড় গুণ ।
চারিত্রিক গুণাবলি : জহির স্যার একজন চরিত্রবান সৎ লোক । সুনাগরিক হিসেবে গড়ে ওঠার ব্যাপারে তিনি আমাদেরকে সহায়তা করেন । তিনি আমাদের শারীরিক ব্যায়াম করতে উৎসাহ প্রদান করেন । তাঁর ভালো অভ্যাস , নম্র ব্যবহার এবং বাস্তবধর্মী আলোচনা আমাদের চরিত্র গঠনে বিশেষ সহায়তা প্রদান করে । এককথায় একজন ভালো শিক্ষক এবং একজন ভালো মানুষের সৎগুণাবলি তাঁর মধ্যে বিদ্যমান ।
নীতিগত বৈশিষ্ট্য : জহির স্যার আমাদের সকলের নিকট ঘনিষ্ঠ বন্ধুর মতো । তবে নীতিগত দিক থেকে তিনি খুবই দৃঢ় । তাঁর পড়া কেউ ফাঁকি দিতে পারে না । আমাদের কারও অসুখ হলে জহির স্যার খোঁজখবর নেন । একবার তিনি আমার টিউমার অপারেশনের সময় হাসপাতালে দেখতে গিয়েছিলেন । তখন আমার যে কী ভালো লেগেছিল , তা কোনোদিন ভুলব না ।
উপসংহার : মাদরাসা সব শিক্ষককেই আমি অত্যন্ত শ্রদ্ধা করি । তবে আমার প্রিয় শিক্ষক জহির স্যারের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা একটু বেশি । তাঁকে আমি প্রাণ দিয়ে ভালোবাসি । তাঁর স্থান আমার হৃদয়ের অন্তস্থলে । আমি সারাজীবন তাঁর আদর্শ ও ন্যায়নীতি অনুসরণ করব ।