আমার প্রিয় শখ : বাগান করা
ভূমিকা : প্রত্যেক মানুষের জীবনে কোনো না কোনো প্রিয় শখ থাকে । এমন অনেক শখ থাকে যা মানুষ মৃত্যু পর্যন্ত পরিত্যাগ করতে পারে না । শখের কাজ মানুষের প্রধান কাজ নয় । এর ওপর মানুষের জীবিকা নির্ভর করে না । কর্মময় জীবনের ফাঁকে ফাঁকে আনন্দ বা তৃপ্তি পাওয়ার জন্যে আমরা শখের কাজ করে থাকি ।
বিভিন্ন শখের কাজ : রুচি , সৌন্দর্যবোধ ও অভ্যাসের দিক থেকে পৃথিবীর সব মানুষের মধ্যে বেশ অমিল লক্ষ করা যায় । তাই ব্যক্তিভেদে শখের কাজ নানারকম হতে পারে । কেউ শখ করে ডাকটিকেট সংগ্রহ করে , কেউ ছবি আকে , কেউ বাগান করে , কেউ ঘুড়ি ওড়ায় , কেউ ছবি তোলে , কেউ মাছ ধরে , কেউ বই পড়ে এবং কেউবা আবার পত্রমিতালি করে । তবে এসব সখের কাজ অবসর সময়েই হয় । প্রধান কাজকে অবহেলা করে শখের কাজ নিয়ে পড়ে থাকলে তা জীবনের জন্যে ক্ষতি ডেকে আনে ।
শখের গুরুত্ব : বিরামহীন কর্মমুখর জীবনে প্রতিটি মানুষেরই প্রয়োজন অবসর ও নির্মল হাসি - আনন্দ । সবচেয়ে বেশি আনন্দ পাওয়া যায় শখের কাজ করার মধ্য দিয়ে । শখের কাজ নির্ধারিত কাজের বাইরে মানুষকে আলাদা আনন্দ ও উৎসাহ দেয় । কর্মব্যস্ত জীবনের মাঝে আনন্দ - উৎসাহের প্রয়োজনেই মানুষ এক বা একাধিক শখের কাজ করতে পছন্দ করে । এমন অনেক শখ আছে যা মৃত্যু পর্যন্ত ডেকে আনে , তবুও মানুষ তার সেই শখ পরিত্যাগ করতে পারে না । আবার শখ করতে গিয়ে কেউ বিরাট কিছু আবিষ্কার করেছে , কেউবা অমর হয়ে আছে ইতিহাসের পাতায় ।
আমার শখ : আমি ষষ্ঠ শ্রেণির একজন ছাত্র । সেজন্যে মাদরাসার প্রতিদিনের পড়া তৈরি করা এবং মাদরাসা থেকে ফিরে এসে বিকালে কিছু সময় আমার হাতে থাকে । তাই বাগান করাকেই আমার শখের কাজ হিসেবে বেছে নিয়েছি । বাগানের যত্ন নেওয়া , নতুন নতুন চারা লাগানো আমার প্রিয় শখ ।
শখের বর্ণনা : ফলের বাগান ও সবজি বাগান মিলিয়ে আমার বাগানের সংখ্যা দুটি । আমার পড়ার ঘরের সামনে একটুখানি খালি জায়গায় আমি ফুলের বাগান করেছি । বাগানটি বেশ মনোরম । আমি নিজের হাতে খুব যত্নসহকারে বাগানটি করেছি । নার্সারি থেকে রকমারি ফুলের চারা এনে লাগিয়েছি । বাগানের চারপাশে বাঁশ দিয়ে শক্ত করে বেড়া দিয়েছি । প্রতিদিন খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে বাগানে কাজ করি । বাগানে পানি দেই , গাছের গোড় আলগা করে দেই । বিকেলে স্কুল থেকে ফিরে ফের বাগানের কাজ তদারকি করি । আমার বাগানের প্রধান আকর্ষণ গোলাপ । টুকটুকে লাল , ফিকে লাল , সাদা , হলুদ প্রভৃতি নানা রঙের গোলাপ ফুল আছে আমার বাগানে । আমার বাগানের অন্যান্য স্থায়ী ফুলের মধ্যে গন্ধরাজ , শেফালি , বেলি , টগর , রক্তকরবী প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য । এ ছাড়া নানা জাতের মৌসুমি ফুল যেমন : গাঁদা , ডালিয়া , সূর্যমুখী , রজনীগন্ধা ইত্যাদি । প্রতি বছরই নতুন নতুন ফুলের আবাদ করে থাকি । ফুলকে যারা ভালোবাসে তাদের সঙ্গে গল্প করে আমি খুব আনন্দ পাই । ফুলের প্রতি আমার প্রবল আকর্ষণ দেখে পাড়া - প্রতিবেশীরা আমার বেশ প্রশংসা করে । এতে আমি গৌরববোধ করি । আমার বন্ধুরা সবাই আমার এ শখটিকে প্রশংসার চোখে দেখে । কেউ কেউ আমার সঙ্গে বাগানে কাজ করে আনন্দ পায় । আমি কাউকে ফুল ছিঁড়তে দিই না । তবে বিশেষ উদ্দেশ্যে যদি কেউ ফুল চায় তাহলে নিষেধ করি না । প্রতিবেশী বাড়ির লোকেরা মাঝে মাঝে ফুল নিতে আসে । আমি তাদেরকে সানন্দে ফুল নিতে দিই । একুশে ফেব্রুয়ারি এলে অনেকেই আমার বাগান থেকে ফুল নিয়ে যায় ।
উপসংহার : বাগান করার মতো শখ পৃথিবীতে দ্বিতীয়টি নেই । প্রতিটি গাছে যখন ফুল ফোটে এবং মৃদু বাতাসে যখন ফুলগাছগুলো আনন্দে মাথা দোলায় , তখন এক স্বর্গীয় আনন্দে মন ভরে যায় । বাগানের সজীব ফুলের সৌরভে আমার মনটিও সর্বদা সজীব থাকে । তবে বাগান করার পাশাপাশি আমার আরও দু - একটি শখ আছে । যেমন : ডাকটিকেট সংগ্রহ করা , বিভিন্ন দেশের মুদ্রা সংগ্রহ করা , মাছ ধরা ইত্যাদি । তবে বাগান করার মধ্যে আমি যতটা নির্মল আনন্দ পাই , অন্য কোনো কাজে ততটা আনন্দ পাই না ।