স্বাস্থ্যই সম্পদ রচনা

 স্বাস্থ্যই সম্পদ

স্বাস্থ্যই সম্পদ রচনা


ভূমিকা : প্রবাদ আছে— ' Health is wealth . ' অর্থাৎ স্বাস্থ্যই সম্পদ । মানবদেহের রোগমুক্ত সুস্থ অবস্থার নাম স্বাস্থ্য । মানবজীবনে স্বাস্থ্যের মতো মূল্যবান সম্পদ আর নেই । আত্মশক্তি , জ্ঞান , চরিত্র ও মনুষ্যত্ব বিকাশের প্রধান উপকরণ হলো স্বাস্থ্য । তাই বলা হয়— ' Health is the root of all happiness . ' অর্থাৎ স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল । 

সুস্বাস্থ্যের প্রয়োজনীয়তা : মানবজীবনে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য লাভ করতে সব ক্ষেত্রেই সুস্বাস্থ্যের প্রয়োজন । শরীর অসুস্থ থাকলে লেখাপড়া , খেলাধুলায় ও অন্যান্য কাজকর্মে মন বসে না । অসুস্থ মন নিয়ে কোনো কাজই সম্পন্ন করা যায় না । আমাদের শরীরের সঙ্গে মনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে । সেজন্যে সবসময় শরীর সুস্থ রাখতে হলে বিভিন্ন বিষয়ের প্রতি আমাদের খেয়াল রাখতে হবে । পরিমিত আহার , বিশুদ্ধ বায়ু সেবন এবং নিয়মিত শরীরচর্চা এর মধ্যে প্রধান । রুগণ স্বাস্থ্যের মানুষ সমাজের বা গোটা পরিবারের কোনো উপকার করতে পারে না । বরং সে পরিবারের বোঝাস্বরূপ । সে কোনো পারিবারিক , সামাজিক অনুষ্ঠান , খেলাধুলায় বা কোনো আমোদ - প্রমোদে অংশগ্রহণ করতে পারে না । পুষ্টিকর খাদ্য খেয়ে সে তা হজম করতে পারে না । তার চিন্তাশক্তি , কর্মশক্তি , বিচারশক্তি ও স্মৃতিশক্তি ধীরে ধীরে লোপ পেতে থাকে । ফলে বিরক্তি , অলসতা , ধৈর্যহীনতা , দুর্বলতা , ভয় - ভীতি ইত্যাদি এসে তাকে ঘিরে ধরে । কেউ ভালো উপদেশ দিলে সে ভীষণ রেগে ওঠে । কিন্তু যে স্বাস্থ্যবান সে পরিশ্রমী , উৎসাহী , অধ্যবসায়ী ও ধৈর্যশীল হয়ে থাকে । জীবনে সুখ - শান্তি ও উন্নতি লাভ করা তার পক্ষে সহজ হয় । কিন্তু স্বাস্থ্যহীন লোকের অনেক টাকা - পয়সা থাকলেও সুখ - শান্তি থেকে বঞ্চিত হয় । তার কাছে পৃথিবী হয়ে ওঠে নিরানন্দময় । সব কাজেই সে আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলে । তার জীবন দুঃখ ও যন্ত্রণায় পরিপূর্ণ থাকে ।

স্বাস্থ্যহানির কারণ : নানা কারণে মানুষের স্বাস্থ্যহানি ঘটে থাকে । যেমন : অনিয়মিত খাদ্যগ্রহণ , অপরিষ্কার থাকা , অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাস করা , অসুখ - বিসুখে দ্রুত ভালো চিকিৎসা না করানো , নেশা জাতীয় বিভিন্ন দ্রব্য গ্রহণ ইত্যাদি । 

স্বাস্থ্যরক্ষার নানা উপায় : স্বাস্থ্যরক্ষার নিয়মগুলো যথাযথভাবে না মেনে চললে সুস্থাস্থ্যের অধিকারী হওয়া যায় না । তাই স্বাস্থ্যরক্ষার জন্যে ছোটবেলা থেকেই কতগুলো নিয়ম - কানুন মেনে চলতে হয় । নিয়মিত শরীর পরিষ্কার করা , বাড়ি - ঘর পরিষ্কার - পরিচ্ছন্ন রাখা , নিয়মিত ব্যায়াম করা , নিয়মিত আহার - নিদ্রা , বিশ্রাম , ঘুমানো ইত্যাদি হচ্ছে স্বাস্থ্যরক্ষার উত্তম উপায় । সকালবেলা মুক্ত বাতাসে ঘুরে বেড়ানো সব বয়সের লোকদের জন্যে অত্যন্ত উপকারী । ভালো স্বাস্থ্যের জন্যে সবসময় দামি খাবার খাওয়ার দরকার নেই । নিয়মিত পুষ্টিকর খাদ্যগ্রহণ স্বাস্থ্যের পক্ষে উপযোগী । স্বাস্থ্যরক্ষার জন্যে খাদ্যের ন্যায় পরিশ্রমও আবশ্যক । পরিশ্রমের ফলে খাদ্যদ্রব্য সহজে হজম হয় এবং খাওয়ার রুচি বাড়ে । যাঁরা মানসিক পরিশ্রম করেন তাঁদের জন্যে শরীরচর্চা একান্ত প্রয়োজন । তবে অত্যধিক শরীরচর্চা আবার ক্ষতিকর । এ ছাড়া কাজের ফাঁকে ফাঁকে পরিমিত বিশ্রামও আবশ্যক । ঘুম সবচেয়ে উত্তম বিশ্রাম । সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠা এবং রাতে ঠিক সময়ে ঘুমাতে যাওয়া উচিত । নিজের স্বাস্থ্য নিজেকে রক্ষা করতে হবে । যেকোনো নেশাজাতীয় দ্রব্য পরিহার করতে হবে । যেকোনো প্রকার রোগ হওয়ার সাথে সাথে ডাক্তারের পরামর্শমতো ঔষধ সেবন করে দ্রুত রোগমুক্ত হতে হবে । অবসর সময়ে ভ্রমণ করা স্বাস্থ্যের জন্যে উপকারী ।

উপসংহার : মানবজীবনে সুন্দর , সুখী ও সমৃদ্ধ জীবনযাপনের জন্যে স্বাস্থ্য প্রধান অবলম্বন । সম্পদ যেমন অভাব অনটনের মূলধন , স্বাস্থ্যও তেমনই জীবনে প্রতি স্তরের আনন্দ ও উন্নতি লাভের সহায়ক বা মূলধন । সুস্থ , সবল , জনশক্তি দেশ ও জাতির অত্যন্ত মূল্যবান সম্পদ । তাই ব্যক্তিগত ও বৃহত্তর স্বার্থে আমাদের প্রত্যেককে স্বাস্থ্যের প্রতি যত্নবান হওয়া কর্তব্য । ' সুস্থ দেহে সুস্থ মনের বাস'— এ মহৎ বাক্যটি স্মরণ রেখে আমাদের সকলের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা উচিত ।

New comments are not allowed.*

Previous Post Next Post