শৃঙ্খলা বা নিয়মানুবর্তিতা
ভূমিকা : সমগ্র বিশ্ব - প্রকৃতি একটা সুনিয়ন্ত্রিত শৃঙ্খলা ও নিয়মের বন্ধনে আবদ্ধ । গ্রহ - নক্ষত্রের ঘূর্ণন , পরিক্রমা , সূর্যোদয় , সূর্যাস্ত , ঋতু পরিবর্তন সবকিছুই নিয়মের অধীন । শৃঙ্খলা ও নিয়মানুবর্তিতা আছে বলে পৃথিবীর যাবতীয় কর্মকাণ্ড অত্যন্ত সুন্দরভাবে পরিচালিত হচ্ছে । মহাবিশ্বের মতো মানবজীবনেও শৃঙ্খলা ও নিয়মানুবর্তিতা অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ।
শৃঙ্খলার গুরুত্ব : মানুষ সামাজিক জীব । তাই তারা একাকী বাস করতে পারে না । পারস্পরিক সাহায্য সহযোগিতার মাধ্যমে মানুষকে বাঁচতে হয় । সমাজে বসবাস করতে হলে মানুষকে সব রকম সামাজিক নিয়ম কানুন মেনে চলতে হয় । পরিবার , সমাজ , রাষ্ট্র ও সংঘ প্রতিটি প্রতিষ্ঠান কঠোর নিয়মের অধীন । নিয়ম - শৃঙ্খলা বিঘ্নিত হলে অশান্তি , অরাজকতা দেখা দেয় এবং পারিবারিক , সামাজিক বা রাষ্ট্রীয় বন্ধন বিপর্যস্ত হয় । নিয়ম - শৃঙ্খলা ছাড়া কোনো কাজই সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয় না । ব্যক্তিগত ও জাতীয় জীবনে উন্নতির জন্যে প্রয়োজন শৃঙ্খলা ও নিয়মানুবর্তিতা । কাজেই সামাজিক , পারিবারিক , রাজনৈতিক জীবনে ; খেলার মাঠে , যুদ্ধক্ষেত্রে , কলকারখানায় , মাদরাসা , স্কুল - কলেজ সর্বত্রই । য়ম - শৃঙ্খলা পালন করে চলা উচিত ।
পারিবারিক জীবনে নিয়মানুবর্তিতা : পরিবারের প্রত্যেক সদস্য যদি নিজ ইচ্ছানুযায়ী চলে তবে পরিবারটির ঐক্য ধ্বংস হয়ে যায় । সুখী এবং সমৃদ্ধ পারিবারিক জীবনের জন্যে নিয়মানুবর্তিতা অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ।
বাল্যজীবনে নিয়মানুবর্তিতা : বাল্যকাল থেকেই প্রত্যেক মানুষকে নিয়মানুবর্তিতার শিক্ষা গ্রহণ করতে হয় । যদি শিশুদেরকে তাদের ইচ্ছামাফিক চলতে দেওয়া হয় তবে তারা নষ্ট হয়ে যাবে ।
সমাজজীবনে শৃঙ্খলা : সামাজিক জীবনে শৃঙ্খলা ও নিয়মানুবর্তিতার প্রয়োজন অপরিসীম । সফল ও মহৎ ব্যক্তিরা আহার - বিহারে , কাজ - কর্মে , চাল - চলনে , আচার - অনুষ্ঠানে সর্বত্রই একটি নিয়ম - শৃঙ্খলার ব্যবস্থা করে গিয়েছেন । নিয়ম - শৃঙ্খলা ব্যাহত হলে সমাজজীবন গড়ে উঠত না এবং গড়ে উঠলেও তা পুনরায় ভেঙে যেত । সমাজের সর্বত্র নিয়ম - শৃঙ্খলা আছে বলেই আমরা সমাজজীবনে সুখে - স্বাচ্ছন্দ্যে বসবাস করতে পারছি ।
ছাত্রজীবনে শৃঙ্খলা : ছাত্রজীবনে শৃঙ্খলা ও নিয়মানুবর্তিতার প্রয়োজনীয়তা সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ । ' পড়ার সময় পড়া আর খেলার সময় খেলা’— এ কথা প্রতিটি শিক্ষার্থীর জন্যে অপরিহার্য । ছাত্র - ছাত্রীদের নিয়মমাফিক লেখাপড়া করার অভ্যাস গঠন করতে হবে । ছাত্ররা যদি নিয়মিত স্কুল - মাদরাসা যায় , নিয়মিত পড়ালেখা করে এবং বাড়ির কাজ সম্পন্ন করে তবেই ভালো ফল করতে পারবে । আর তারা যদি পড়ালেখায় অমনোযোগী হয় তাহলে কৃতকার্য হতে পারবে না ।
নিয়মানুবর্তিতার দৃষ্টান্ত : সক্রেটিস , প্লেটো , নিউটন , আইনস্টাইন প্রভৃতি জ্ঞানী ও গুনীজন নিয়মানুবর্তিতাকে জীবনে অলংকৃত করে রেখেছিলেন । তাই তো তাঁরা চির অমর হয়ে বেঁচে আছেন পৃথিবীর সব মানুষের আত্মার সঙ্গে একান্ত আপন হয়ে মিশে ।
উপসংহার : জীবনের সবক্ষেত্রে শৃঙ্খলার প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য । শৃঙ্খলাহীন জীবন কখনও সঠিকভাবে চলতে পারে না । এজন্যে মানবজীবনের সর্বক্ষেত্রে শৃঙ্খলা বজায় রেখে চলতে হবে । তাহলে মানবজীবন সুখী , সুন্দর ও সার্থক হবে ।