অধ্যবসায়
ভূমিকা : অধ্যবসায় মানবজীবনের সবচেয়ে বড় গুণ । কঠোর সাধনা ও পরিশ্রম ব্যতীত কখনোই কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে , পৌছানো যায় না । আর এই ঈপ্সিত লক্ষ্যে পৌছানোর জন্যে প্রয়োজন অধ্যবসায় ।
অধ্যবসায় কী : ‘ অধ্যবসায় ’ শব্দের অর্থ— অবিরাম সাধনা । কোনো কাজে সফল হওয়ার জন্যে মানুষের ক্রমাগত যে চেষ্টা তার নামই অধ্যবসায় । মানব চরিত্রের যেসব গুণ জীবনকে সুন্দর ও সার্থক করে তুলতে পারে অধ্যবসায় তার মধ্যে অন্যতম । এ অনন্য গুণের সাহায্যে অসাধ্য সাধন করা যায় । প্রকৃতপক্ষে অধ্যবসায় হলো এক ধরনের মানসিক বল । যার মানসিক বল যত বেশি , সে তত বেশি অধ্যবসায়ী । পরাজয় কখনও অধ্যবসায়ীর পথে বাধা হতে পারে না ।
অধ্যবসায়ের গুরুত্ব : কঠোর পরিশ্রম , ধৈর্য , উদ্যম ও অবিচল সংকল্প অধ্যবসায়ের অঙ্গ । মানুষের জীবনে সাফল্য এবং ব্যর্থতা দু - ই আছে । কিন্তু সব ব্যর্থতাই সাময়িক । ব্যর্থতাকে জয় করার জন্যে দরকার ক্রমাগত চেষ্টা । ব্যর্থতার নৈরাশ্যকে দূর করার জন্যে দরকার অধিক উৎসাহ নিয়ে কর্তব্যকর্মে এগিয়ে যাওয়া । কারণ অধ্যবসায় সহকারে বার বার চেষ্টা করলে দেরিতে হলেও সফলতা একদিন আসবেই । সেদিন পূর্বের ব্যর্থতার গ্লানি মুছে গিয়ে সফলতার মুকুট মাথায় শোভা পাবে । পৃথিবীতে যা কিছু মহৎ , যা কিছু সুন্দর , যা কিছু কল্যাণকর সবই অধ্যবসায়ের দ্বারা অর্জিত হয়েছে । অধ্যবসায়ী না হলে কোনো জাতি উন্নতি লাভ করতে পারে না । পৃথিবীতে বাধাবিঘ্ন অতিক্রম করার শক্তি যার যত বেশি , সাফল্যও তার তত বেশি এবং জীবনযুদ্ধে জয়লাভ করার ক্ষমতাও তার সর্বাধিক ।
ছাত্রজীবনে অধ্যবসায় : আজকের ছাত্ররাই আগামীদিনের জাতিকে নেতৃত্ব দেবে । সুতরাং ছাত্রজীবনে অধ্যবসায়ের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য । অলস ও শ্রমবিমুখ ছাত্র - ছাত্রীরা জীবনে কখনও বিদ্যার্জন করতে পারে না । অধ্যবসায়ী ছাত্র - ছাত্রীরা অল্প মেধাসম্পন্ন হলেও সফলতা লাভ করতে পারে । কোনো ছাত্র যদি প্রথম বা দ্বিতীয় বারের চেষ্টায় অকৃতকার্য হয়ে হাত পা গুটিয়ে বসে থাকে , তবে সে আর সফলতা অর্জন করতে পারে না । কোনো ছাত্রকে একবার বিফল হয়ে বসে থাকলে চলবে না , তাকে দ্বিগুণ উৎসাহে পুনরায় চেষ্টা করতে হবে ।
অধ্যবসায় ও প্রতিভা : আজকাল বহুজনের বিশ্বাস অধ্যবসায় বলে কিছু নেই , সব সাফল্যের মূলে রয়েছে প্রতিভা । কিন্তু কঠোর পরিশ্রম ও একনিষ্ঠ সাধনা ছাড়া কোনো কাজেই সফলতা লাভ করা যায় না । লেখাপড়া , শিল্প , সাহিত্য , গবেষণাসহ জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই সফলতা নির্ভর করে অধ্যবসায়ের ওপর । প্রতিভা জন্মসূত্রে প্রাপ্ত বিশেষ গুণ । কিন্তু শুধু প্রতিভা দ্বারা কোনো কাজ করা যায় না । অধ্যবসায় প্রতিভাকে ধারালো করে । প্রতিভার অধিকারী না হয়েও শুধু অধ্যবসায়ের গুণে অনেক অসম্ভবকে সম্ভব করে তোলা যায় । বিজ্ঞানী নিউটন প্রতিভার চেয়ে অধ্যবসায়কে বড় করে দেখেছেন । তিনি বলেছেন , ' প্রতিভা বলে কিছু নেই । পরিশ্রম এবং সাধনা করে যাও , তাহলে প্রতিভাকে অগ্রাহ্য করতে পারবে । '
অধ্যবসায়ের দৃষ্টান্ত : অধ্যবসায়ের এক অতি পরিচিত দৃষ্টান্ত হচ্ছেন স্কটল্যান্ডের রাজা রবার্ট ব্রুস । তিনি ইংল্যান্ডের রাজা এডওয়ার্ডের সঙ্গে যুদ্ধে ছয় বার পরাজিত হয়ে হতাশ হয়ে পড়েন । রাজ্যের আশা প্রায় ছেড়ে দিয়ে এক নির্জন স্থানে হঠাৎ লক্ষ করেন , একটি মাকড়সা জাল বুনতে গিয়ে ছয় বার ব্যর্থ হয় । কিন্তু সাত বারের পর সে সফল হয় । এটা দেখে রবার্ট ব্রুস পুনরায় বিপুল উৎসাহ নিয়ে সৈন্য সংগ্রহ করেন এবং সপ্তম বারের যুদ্ধে বিজয়ী হন । অর্ধ - পৃথিবীর অধিশ্বর নেপোলিয়ন তাঁর কর্মকাণ্ডে অপূর্ব নিদর্শন রেখে গেছেন । তিনি বলেছেন- ' Impossible is a word which is found only in the dictionary of a fool . *
উপসংহার : জীবনে সাফল্য লাভ করে জাতিকে সমৃদ্ধ করার জন্যে অধ্যবসায়ের কোনো বিকল্প নেই । মানুষের জীবনে অধ্যবসায়ের গুরুত্ব তাই অনস্বীকার্য । প্রতিটি মানুষের উচিত এই বিশেষ গুণের অধিকারী হওয়া । আর তাহলেই ব্যক্তিজীবনে , জাতীয় জীবনে , বিশ্বসভায় মানুষ আরও বেশি অবদান রাখতে পারবে ।
Nice Post
ReplyDelete