নৌকা ভ্রমণ রচনা

  নৌকা ভ্রমণ 

 

নৌকা ভ্রমণ

ভূমিকা : বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ । এ দেশটির বুকের ওপর দিয়ে বয়ে গেছে অসংখ্য ছোটবড় নদ - নদী । নদ নদীর এ দেশে বছরের যে কোনো মৌসুমেই নৌকা ভ্রমণ অত্যন্ত আনন্দের ও উপভোগের । নৌকা ভ্রমণে বাংলা মায়ের স্বরূপ চিনতে পারা যায় , পাওয়া যায় অকৃত্রিম আনন্দ যা অন্য কোনো ভ্রমণে আশাও করা যায় না । জীবনে এ সুযোগ আসামাত্র সবার সাদরে নিমন্ত্রিত অতিথিদের মতো গ্রহণ করা উচিত ।

নৌকা ভ্রমণের উদ্দেশ্য : সময়টা শরৎকাল । স্কুলে গিয়ে জানলাম স্কুল এ সপ্তাহ বন্ধ থাকবে । এক সপ্তাহের বন্ধে আমরা সবাই আনন্দে আত্মহারা । আমরা দুইবন্ধু মিলে সিদ্ধান্ত নিলাম । অবসর বিনোদনে মেঘনা নদীতে বেড়াতে যাব । সেই দিনের সেই স্মৃতি আজও আমার পরিষ্কার মনে পড়ছে ।

নৌকা ভ্রমণের আয়োজন : সকাল আটটায় বাগমারী থেকে যাত্রা করলাম । আমরা সাথে বিস্কুট , কলা , নারকেল , বাদাম ও বিনোদনের জন্যে একটি ক্যাসেট প্লেয়ার নিলাম । দুপুরে খাওয়ার জন্যে রান্না করা পোলা ও গরুর মাংস সাথে নিলাম । রনি নিল তার হারমোনিয়াম , মিশেল নিল ক্যামেরা , নিপুণ নিল বাঁশি । আর আমি নিলাম একটি রেডিও । 

নৌকা ভ্রমণের বর্ণনা : মেঘনা নদীতে তখন পূর্ণ যৌবন । সকালে মেঘনা উপভোগ্য । স্রোতের অনুকূলে নৌকাটি চলতে লাগল । নদীতে নানা রঙের পাল তোলা ছোটবড় অনেক নৌকা দেখলাম । মাঝে মাঝে লঞ্চ ও স্টিমারের দেখা পেলাম । নৌকা , লঞ ও স্টিমারের দৃশ্য দেখতে খুবই মনোরম । কিছু কিছু জেলে নদীতে জাল ফেলছে । জেলেদের মাছ ধরার কৌশলও অভিনব । দূরে গ্রামগুলোকে মনে হলো আকাশের প্রান্তের সাথে মিশে যাচ্ছে । মাছরাঙা পাখি নদীতে ডুব দিয়ে কিছুক্ষণ পরে মাছ নিয়ে ভেসে উঠছিল । সাদা সাদা বালিহাঁস নদীর পানিতে খেলা করার দৃশ্য খুবই মনোরম । এসব দৃশ্য আমাদের খুব ভালো লাগছিল । চারদিকে কূল নেই , কিনারা নেই , বাতাস নেই তবু ঢেউয়ের খেলা । এরূপ দৃশ্য দেখতে দেখতে আমাদের নৌকা চলতে লাগল । হঠাৎ রনির কণ্ঠে ধ্বনিত হলো আমার গহীন গাঙের নাইয়া ......। রনির গানের সাথে সাথে নিপুণ বাজাচ্ছিল বাঁশি । আমরা সবাই মুগ্ধ হয়ে গান শুনতে লাগলাম । সমগ্র পরিবেশটা একটা স্বপ্নময় কল্পলোকে পরিণত হলো । রনির গানের শেষে মাঝির কণ্ঠে ধ্বনিত হলো ভাটিয়ালি রাগিনি- ‘ পদ্মার ঢেউরে মোর শূন্য হৃদয় নিয়ে .....। ' নদীর নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখতে দেখতে আমরা কামারঘাট বাজারে এসে পৌঁছলাম । আমরা সবাই বাজারে নিয়ে চা পান করলাম । তারপর আবার নৌকা চলতে লাগল । চারদিকের বিভিন্ন দৃশ্য দেখতে দেখতে হৈ চৈ এর মধ্য দিয়ে কখন বেলা দুটা বেজে গেল টেরও পেলাম না । রাঢ়িখাল স্টিমার ঘাটে নৌকা ভিড়িয়ে আমরা সবাই নৌকা হতে তীরে নামলাম । স্টিমার ঘাটের পাশের গ্রামগুলো আমরা ঘুরেফিরে দেখলাম । দেখার পর বেলা তিনটার সময় নৌকার নিকট আসলাম এবং সবাই মেঘনা নদীতে গোসল করলাম । গোসল শেষ করে একসাথে সবাই মিলে খাওয়ার পর্ব শেষ করলাম । আনন্দ - উল্লাসের মধ্য দিয়ে খাওয়া শেষ করে সবাই নৌকায় বিশ্রাম নিলাম । এবার প্রত্যাবর্তনের পালা । সাড়ে চারটায় মাঝি নৌকা ছাড়ল । নৌকা চলতে চলতে সন্ধ্যা গড়িয়ে আসল । উপভোগ করলাম নদীতীরে সূর্যাস্তের মনোরম দৃশ্য । সূর্য যখন অস্ত যাচ্ছিল তখন তার লাল রক্তিম আলোকবিন্দু কূলের গাছ গাছালির ওপর বিলিয়ে দেয়ার অপরূপ সৌন্দর্য দেখলাম । 

উপসংহার : নৌকাভ্রমণ যে কত আনন্দের , কত উপভোগের তা নৌকাভ্রমণে না গেলে বুঝতেই পারতাম না । কর্মব্যস্ত সময়ে সেদিনের নৌকাভ্রমণের সুখকর স্মৃতি আজও আমার মনে যখন উদয় হয় তখন বড়ই ভালো লাগে ।

New comments are not allowed.*

Previous Post Next Post