সময়ের মূল্য
ভূমিকা : প্রবাদ আছে- ' Time and tide wait for none . ' সময় ও নদীর স্রোত কারও জন্যে অপেক্ষা করে না । সময় একবার চলে গেলে তা আর কোনোদিনই ফিরে আসে না । মানবজীবন সংক্ষিপ্ত । এ স্বল্প জীবনে মানুষকে অসংখ্য কাজ করতে হয় । তাই আমাদের দৈনন্দিন জীবনে উন্নতি করতে হলে সময়ের সদ্ব্যবহার করতে হবে ।
সময়ের মূল্য : একটা কাজ সঠিক সময়ে সম্পাদন করাই সময়ের সদ্ব্যবহার । কোনো কাজ পরে করার জন্যে ফেলে । রাখা উচিত নয় । তাহলে সে কাজ আর কখনও সম্পন্ন হয় না । নদী যেমন ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জলবিন্দুর সমষ্টি ; আমাদের জীবনও সেরূপ কতকগুলো মুহূর্তের সমষ্টি । আমাদের জীবনের প্রতিটি মুহূর্তই মূল্যবান । আমরা যদি প্রতিটি মুহূর্তের মূল্য বুঝে সময়ের সদ্ব্যবহার করতে পারি , তাহলেই জীবনে উন্নতি করতে পারব ।
সময়ের গুরুত্ব : সময় এমন একটি মূল্যবান সম্পদ যা একবার চলে গেলে লক্ষ টাকার বিনিময়েও তাকে আর ফিরিয়ে আনা যায় না । মানুষের ধন - সম্পদ , সম্মান , স্বাস্থ্য ইত্যাদি খোয়া গেলে চেষ্টার দ্বারা তা ফিরে পাওয়া যেতে পারে । কিন্তু সময় একবার চলে গেলে আজন্ম চেষ্টার দ্বারাও সে সময়কে আর ফিরে পাওয়া যায় না । সময় তার পথ ধরে অবিরাম চলতে থাকে । প্রত্যেকটি মুহূর্ত সম্ভাবনা নিয়ে আমাদের কাছে হাজির হয় । তাকে কাজে লাগিয়ে আমাদের ক্ষণস্থায়ী জীবনকে সার্থক করে তুলতে হবে । প্রতিটি মুহূর্তকে যত সুন্দরভাবে কাজে লাগাব আমাদের জীবন ততই সুন্দর হবে । সময়ের যথাযথ ব্যবহারে ক্ষণস্থায়ী জীবন , জ্ঞান ও কর্মের মহিমায় উজ্জ্বল হয়ে ওঠে । ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় , পৃথিবীতে যাঁরা মহান হয়ে আছেন তাঁদের সকলেই ছিলেন সময়নিষ্ঠ । ইংরেজিতে একটি প্রবাদ আছে ' Time is money ' , অর্থাৎ সময়ই অর্থ । এখানে অর্থ বলতে সম্পদকে বোঝানো হয়েছে । মানবজীবনকে সফল ও সার্থক করে তুলতে হলে এ অমূল্য সম্পদ সময়ের সদ্ব্যবহার করা একান্ত প্রয়োজন । মূল্যবান সময়কে কখনও নষ্ট করা উচিত নয় ।
সময়ের সদ্ব্যবহার করার উপায় : সময়ের সদ্ব্যবহার করতে হলে আমাদেরকে আলস্য , বিলাসিতা ও অযথা সময় নষ্ট না করে একান্তভাবে কর্ম - সম্পাদনে মনোনিবেশ করতে হবে । এজন্যে প্রধানত দরকার : সময়ের কাজ যথাসময়ে করা ; নির্দিষ্ট সময়ের কাজ যথানিয়মে সম্পাদন করা । কাজের পরিমাণ বিবেচনা করে সময়কে ভাগ করে নিলে ঠিক সময়ে কাজটি শেষ করা সম্ভব হবে । তাই বলা যায় , ব্যক্তিগত ও সমাজজীবনে সময়ের মূল্য সম্পর্কে সচেতনতা গড়ে তোলার মাধ্যমে সময়ের সঠিক ব্যবহার করা সম্ভব ।
সময় অপব্যবহারের কুফল : অযথা সময় নষ্টকারী জীবনে কখনও উন্নতি করতে পারে না । যেসব শিক্ষার্থী অলসভাবে সময় নষ্ট করে তারা পরীক্ষায় ভালো ফল করতে পারে না এবং জীবনে উন্নতিও করতে পারে না । যে কৃষক সময়মতো জমি চাষ করে বীজ বপন করে না সে কখনও ভালো ফসল আশা করতে পারে না । যে জাতি সময়কে মূল্যায়ন করে না সে জাতির ধ্বংস অনিবার্য । ' ওয়াটার লু ’ যুদ্ধে নেপোলিয়ানের জনৈক সেনাপতি পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ের মাত্র কয়েক মিনিট পর উপস্থিত হওয়ায় নেপোলিয়ানকে শোচনীয় পরাজয় বরণ করতে হয়েছিল ।
ছাত্রজীবনে সময়ের সদ্ব্যবহার : ছাত্রজীবনে সময়ের সঠিক ব্যবহারের ওপর নির্ভর করে ভবিষ্যৎ জীবনের সফলতা । | ছাত্রজীবনেই ‘ পড়ার সময় পড়া এবং খেলার সময় খেলা' – এ নিয়ম মেনে চলা উচিত । এতে পরবর্তী জীবনে সময়নিষ্ঠ হওয়া যায় এবং জীবনে উন্নতি লাভ করা যায় । তাই বৃথা সময় নষ্ট না করে সময়মতো প্রতিদিন লেখাপড়া করলে পরীক্ষায় ভালো ফল করা যায় । ছাত্রজীবন পরবর্তী জীবনের প্রস্তুতিকাল । সুতরাং এসময়ে সময়ের সদ্ব্যবহার করলে পরবর্তী জীবনে উন্নতির উচ্চশিখরে আরোহণ করা যায় । বিখ্যাত মনীষীদের জীবনী পাঠ করলে দেখা যায় যে , ছাত্রজীবনেই তাঁরা সময়ের ব্যবহার করেছেন ঠিকমতো এবং গড়ে নিয়েছেন অসাধারণ সাফল্যমণ্ডিত উজ্জ্বল জীবন।
সময়নিষ্ঠ ব্যক্তির দৃষ্টান্ত : পৃথিবীতে যেসব মহৎপ্রাণ ব্যক্তি কর্মনিষ্ঠার মাধ্যমে আত্মপ্রতিষ্ঠা ও মানবকল্যাণে বিশেষ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হয়েছেন তাঁদের সবাই ছিলেন সময়নিষ্ঠ । জীবনের প্রতিটি মুহূর্তই ছিল তাঁদের নিকট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । হযরত মুহম্মদ ( স ) , আব্রাহাম লিংকন , আইনস্টাইন , অ্যারিস্টটল , ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর , রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রমুখের জীবনী পাঠ করলে দেখা যায় , তাঁরা কখনও সময় অপচয় করেন নি ।
উপসংহার : আধুনিক জীবন ব্যবস্থায় সময়ের মূল্য অপরিসীম । কেননা জ্ঞান - বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে অকল্পনীয় অগ্রগতি সাধিত হয়েছে , বেড়েছে জীবনসংগ্রামে ভিন্নমাত্রিক প্রতিযোগিতা । তাই সময়ের ব্যবহার হওয়া চাই অত্যন্ত সুপরিকল্পিত ও ফলপ্রসূ । তাহলেই জীবনে আসবে সার্থকতা ।