ক্রিকেট খেলা রচনা

 ক্রিকেট খেলার রচনা

ক্রিকেট খেলার রচনা


ভূমিকা : আধুনিক বিশ্বে এক অতি জনপ্রিয় ও অভিজাত খেলার নাম ‘ ক্রিকেট ’ । এ খেলার রাজকীয় গুণাবলি ও বৈশিষ্ট্যের কারণে একে খেলার রাজাও বলা হয় । বর্তমানে আমাদের দেশে ফুটবল খেলার পাশাপাশি ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা ঈর্ষণীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে । রেকর্ড গড়ার আর রেকর্ড ভাঙার খেলার নাম ক্রিকেট । তাই ক্রিকেট নিয়ে সারা বিশ্বে এত মাতামাতি , এত কোলাহল , এত উত্তেজনা । 

উৎপত্তি ও ইতিহাস : ক্রিকেট খেলার প্রথম প্রচলন কবে , কোথায় হয়েছিল তার সঠিক ইতিহাস জানা যায় না । মনে করা হয় ত্রয়োদশ শতাব্দী থেকে ইংল্যান্ডে ক্রিকেট খেলা শুরু হয় । পরবর্তীকালে এটি সমগ্র ব্রিটেন এবং সকল ব্রিটিশ উপনিবেশে ছড়িয়ে পড়ে । বর্তমানে অস্ট্রেলিয়া , ইংল্যান্ড , দক্ষিণ আফ্রিকা , নিউজিল্যান্ড , ওয়েস্টইন্ডিজ , পাকিস্তান , শ্রীলঙ্কা , ভারত , জিম্বাবুয়ে এবং বাংলাদেশসহ অনেক দেশে এ খেলা জনপ্রিয়তা লাভ করেছে । 

উপকরণ : ক্রিকেট খেলার প্রধান উপকরণ কাঠের তৈরি ব্যাট , যা ব্যাট আইন অনুযায়ী দৈর্ঘ্য আড়াই ফুট ও প্রস্থে চার ইঞ্চি হয় । তা ছাড়া সাড়ে তিন ইঞ্চি ব্যাসবিশিষ্ট প্রায় ৩৮০ গ্রাম ওজনের একটি চামড়ার তৈরি বল ব্যবহার করা হয় । এ ছাড়া কাঠের তৈরি তিনটি দণ্ড প্রয়োজন হয় , ক্রিকেটের পরিভাষায় সেগুলোকে বলা হয় উইকেট । উইকেটের মধ্যে ব্যবধান সমান রাখার জন্যে একটি নির্দিষ্ট মাপের দু টুকরো কাঠ উইকেটের ওপর বসানো হয় , একে ' বেল ' বলে । বলের সামান্য আঘাত পেলেই ' বেল ' মাটিতে পড়ে যায় এবং এতে খেলার মীমাংসা সহজ হয় । 

মাঠের আকৃতি : ক্রিকেট মাঠটি বৃত্তাকার । সাধারণত এর ব্যাসার্ধ হয় ৭০ গজ । মাঠের মাঝখানে বিশেষ প্রক্রিয়ায় তৈরি করা হয় ‘ পিচ ' । পিচের দৈর্ঘ্য হয় ২২ গজ ।

ক্রিকেট খেলার নিয়ম - কানুন : দুজন আম্পায়ার বা বিচারক এ খেলা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করেন । ক্ষেত্রবিশেষে তৃতীয় আম্পায়ারও দেখা যায় । ক্রিকেট দুই দলে খেলতে হয় । প্রত্যেক দলে এগারো জন করে খেলোয়াড় থাকে । খেলা শুরু করার আগে দুজন আম্পায়ার ও দু দলের দুজন অধিনায়ক মাঠে নামেন । কোন দল আগে ব্যাট করবে তা টস করে অর্থাৎ একটি মুদ্রা ছুড়ে দিয়ে ঠিক করা হয় । টস জয়ী অধিনায়ক ব্যাটিং বা ফিল্ডিং যেকোনো একটি বেছে নিতে পারেন । উভয় দলকে পর্যায়ক্রমে একবার করে ব্যাট করতে হয় । ফিল্ডিংকারী দলের সমস্ত খেলোয়াড় মাঠের ভেতর অধিনায়কের নির্দেশ অনুসারে নিজেদের জায়গায় অবস্থান নেয় । যে দল প্রথমে ব্যাটিং করবে সে দলের দুজন খোলোয়াড় ব্যাট হাতে দু উইকেটে গিয়ে দাঁড়ায় । তাদের মধ্যে একজন বল পেটায় এবং দুজনে দৌড়ায় দলের জন্যে রান সংগ্রহ করতে । প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়রা ব্যাটসম্যানদের আউট করার আপ্রাণ চেষ্টা করে । তাদের একজন একদিক হতে বল নিক্ষেপ করে ব্যাট ধারণকারীর উইকেট স্পর্শ বা আঘাত করতে চেষ্টা চালায় । বল নিক্ষেপকারী হলো বোলার । একজন বোলার পরপর ছয়টি বল করতে পারে । একে বলে ওভার । ব্যাটসম্যান বিশেষ দৃঢ়তা সতর্কতার সঙ্গে বল পেটাতে থাকে এবং সুযোগমতো একে দূরে পাঠিয়ে দেয় । বল দূরে পাঠিয়ে দিলে অন্যদিকের উইকেটে অপেক্ষমাণ খেলোয়াড় ও ব্যাটসম্যান একে অপরের উইকেটে দৌড়ে আসলে এক রান হয় । বল গড়িয়ে সীমারেখা অতিক্রম করলে চার রান হয় । আর বাতাসে ভেসে সীমানা অতিক্রম করলে হয় ছয় রান । উইকেটে বল লাগলে ব্যাটসম্যান আউট হয়ে যায় । একে বোল্ড আউট বলে । ব্যাট দিয়ে আঘাত করার পর তা মাটিতে পড়ার আগেই বিপক্ষ দলের কোনো খেলোয়াড় ধরে ফেললে ব্যাটসম্যান আউট হয়ে যায় । একে কট আউট বলে । এ ছাড়া একজন ব্যাটসম্যান রান আউট বা স্টাম্প আউটও হতে পারে । একদলের সবাই আউট হয়ে গেলে বা সময় শেষ হয়ে গেলে অন্য দল ব্যাটিং করতে আসে । খেলার জয় - পরাজয় নির্ধারিত হয় রানের সংখ্যা বা নির্দিষ্ট সময়ে কতজন ব্যাটসম্যান নট আউট থেকে যায় । তার হিসাবের দ্বারা । খেলার সময় যে দল রান বাড়ানোর দিকে এবং উইকেট রক্ষার দিকে লক্ষ রাখে , সে দলই জয়ী হয় ।

ক্রিকেটের শ্রেণি : বিশ্ব ক্রিকেটে তিন শ্রেণির ক্রিকেট খেলা প্রচলিত । একটি হলো টেস্ট ক্রিকেট , অন্যটি ওয়ানডে ক্রিকেট । টেস্ট ক্রিকেট সাধারণত পাঁচদিন ব্যাপী অনুষ্ঠিত হয় । একদল যখন ব্যাট করে তখন তাকে বলে একটি ইনিংস । টেস্টে প্রতিটি দল এভাবে দুই ইনিংস ব্যাট করতে পারে । আর ওয়ানডে ক্রিকেটের জন্যে নির্দিষ্ট সময় সাত ঘণ্টা । প্রতিটি দল এক ইনিংস ব্যাট করতে এবং সীমিত ৫০ ওভার পর্যন্ত বল করতে পারে । ওয়ানডে ক্রিকেট যথেষ্ট উত্তেজনাপূর্ণ ও জনপ্রিয় খেলা । তবে এখন ২০ ওভারের টুয়েন্টি টুয়েন্টি ক্রিকেট বেশ উত্তেজনাপূর্ণ । ইতোমধ্যেই তা অভাবনীয় জনপ্রিয়তা পেয়েছে । 

উপকারিতা : অন্য সব খেলার ন্যায় ক্রিকেট খেলাও স্বাস্থ্যপ্রদ ও আনন্দদায়ক , খেলোয়াড়দের মধ্যে কঠোর শৃঙ্খলাবোধ , পারস্পরিক বোঝাপড়া , সহিষ্ণুতা , ধৈর্য , দায়িত্বজ্ঞান ও সতর্কতার শিক্ষা ক্রিকেট খেলার মধ্য দিয়ে বৃদ্ধি পায় । 

অপকারিতা : ক্রিকেট খেলা একেবারে ঝুঁকিমুক্ত নয় । বোলার কর্তৃক সজোরে নিক্ষিপ্ত বল যেকোনো খেলোয়াড়কে মারাত্মকভাবে আঘাত করতে পারে । 

উপসংহার : আধুনিক গতিশীল বিশ্বে যথেষ্ট ব্যয়সাপেক্ষ ও সময়সাপেক্ষ খেলার নাম কিক্রেট । তবুও এ খেলায় আনন্দের কমতি নেই , ভাটা নেই জনপ্রিয়তার । চলমান বিশ্ব ক্রিকেটের সঙ্গে সমান তালে তাল মিলিয়ে অগ্রসর হচ্ছে বাংলাদেশের ক্রিকেট ।

New comments are not allowed.*

Previous Post Next Post